প্রজনন মৌসুমে একাট ডিমওয়ালা মা ইলিশ ২ থেকে ৩ লাখ ডিম ছাড়ে। বছরের পর বছর ডিমওয়ালা মা ইলিশ নিধন করায় মেঘনায় ইলিশের আকাল দেখা দিয়েছে। জেলেদের জীবনে নেমে এসেছে দুর্দিন। ঋনের বোঝা বেড়ে দাদন ও সুদ ব্যবসায়ীদের যাঁতাকলে পৃষ্ট হয়ে পেশা বদল করেছে অর্ধকোটি জেলে। জাতীয় আয়, বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ,আমিষের সরবরাহ,কর্মসংস্থান কমেছে। দারিদ্র,বেকারত্ব,অশিক্ষা,বাল্য বিয়ে-যৌতুক,নারী নির্যাতন বেড়েছে উপকুলের জনপদে। সরকার মৎস্য সংরক্ষণ আইন পরিবর্তন, বিধিমালা সংশোধন, জাটকা সংরক্ষণ ও জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান, ভিজিএফ প্রকল্প চালু, ডিমওয়ালা মা ইলিশ নিধন বন্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কোন ফল পায়নি। ২০০৭ সাল থেকে শুরু হয় কোষ্টগার্ডের সমন্বযে যৌথ অভিযান। অভিযান পরিচালনায় ক্যাপ্টেনের ভূমিকায় থাকেন মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ডিমওয়ালা মা ইলিশ নিধন অভিযান ইতিপূর্বে হয়ে পড়ে কারো কারো জন্য কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য । এর একটি অংশ বিগত দিনে অভিযান পরিচালনাকারীদের ম্যানেজে ব্যয় হতো। যে কারনে বানিজ্যে বাধা মৎস্য কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা কে অপদস্ত হতে হয়েছে দুর্বৃত্তদের হাতে। দিনে দিনে ইলিশ নিধনকারী দুস্কৃতকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। ২০১১ সালে লুধূয়া মাছ ঘাটে কোষ্টগার্ডের উপর তারা হামলা চালায়। আত্মরক্ষার্থে কোষ্টগার্ড ২৫০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। ওই হামলার নের্তৃত্বদানকারীরা মামলা থেকে অব্যহতি পায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে ব্যপক জনসচেতনা মূলক উদ্বৃদ্ধকরণ কাজে স্বপ্রণোদিত দায়িত্ব পালনকারী ফলকন ইউপি চেয়ারম্যান এ এন এম আশরাফ উদ্দিনের উপর ভয়াভহ আক্রমন চালায়। মৃত্যুর মুখোমুখি সাংবাদিক ইউপি চেয়ারম্যান এর ফোন কল রিসিভ করেননি তৎকালীন ইউএনও বরং উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে অংশ নেওয়ায় উল্টো ভৎর্সনা করেন।২০১৩ সালে দৃশ্যপট বদলে গেছে । দলে দলে জেলেদের নদীতে ডিমওয়ালা মা ইলিশ শিকার উৎসব, মোটর সাইকেল, পিকআপ, সিএনজি, রিক্সা ও সাইকেলে মাছ পরিবহণ। রাতদিন মাছ ঘাটে, গ্রামের রাস্তায় ও বাজারে ইলিশ বেচাকেনার ধুম, বাস ট্রাকে মাছের টুকরি উঠানামা, লবন মাছের মজুদ ও লুট কিছুই চোখে পড়েনি চলতি অভিযানে। সবশেষ ডিমওয়ালা মা ইলিশ নিধন কারী মাফিয়া ডনের গ্রেফতার ও কারাদন্ড সবই সম্ভব হয়েছে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল এর কঠোর অবস্থানে। জেলেরা বলছেন, চলতি অভিযানে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পেরেছে । ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান শতভাগ সফল হওয়ায় কমলনগর উপকূলের জেলে ব্যবসায়ী সকল শ্রেণী পেশার মানুষ যেমন খুশি হয়েছে তেমনি এর ফলাফল হিসেবে মেঘনায় প্রচুর পরিমানে ইলিশ পাওয়ার আশাবাদী হয়ে উঠেছে উপকূলবাসী।উল্লেখ্য ১২ অক্টোবর শনিবার বিকেল ৫টার দিকে জেলার কমলনগর উপজেলার মতিরহাট জেলা মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক উদ্বুদ্ধকরণ সভায় ডিমওয়ালা মা ইলিশ নিধন না করার শপথ নেন জেলেরা। অবাধে মেঘনার কমলনগর উপকূলে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য ১৩ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর সরকারি নিষেধাজ্ঞার ১১দিনে মেঘনা নদীতে মা ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার শপথ করেছেন উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। কমলনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক এ কে এম মিজানুর রহমান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শরিফুল ইসলাম, কোস্টগার্ড কমান্ডার লে. মিল্টন, চর ফলকন ইউপি চেয়ারম্যান এ এন এম আশরাফ উদ্দিন,কমলনগর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এ কে এম নুরুল আমিন মাস্টার, জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির রফিকুল ইসলাম, ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান লিটন প্রমুখ। এ সময় মৎস্য বিজ্ঞানী ড. রফিকুল ইসলাম, কমলনগর থানার অফিসার ইন চার্জ পুলিশ পরিদর্শক আবদুল জব্বার, কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান,সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল চন্দ্র ঘোষ সভায় উপস্থিত ছিলেন। লেখক ও সংবাদকমী- এ এন এম আশরাফ উদ্দিন, চেয়ারম্যান,চর ফলকন ইউপি, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS